রাজশাহী থেকে সাজেক যেতে কত টাকা খরচ হয়

সাজেক কোথায় অবস্থিত এবং রাজশাহী থেকে সাজেক যেতে কত টাকা খরচ হয় এ বিষয়ে কি আপনি জানতে চান? এই পোষ্টের মধ্যে রাজশাহী থেকে সাজেক যেতে কত টাকা খরচ হয় সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

রাজশাহী-থেকে-সাজেক-যেতে-কত-টাকা-খরচ-হয়.webp

সাজেক যাওয়ার পথে, আপনি সাজেক ভ্রমণের অর্ধেক সৌন্দর্য এবং আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।পাহাড়ের ভিতর দিয়ে সাজেকের উপত্যকার সুন্দর রাস্তা এবং সাজেকের সৌন্দর্য আপনার মন জয় করে নেবে। চলুন এবার, রাজশাহী থেকে সাজেক যেতে কত টাকা খরচ হয় এবং সাজেকের সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রাজশাহী থেকে সাজেক যেতে কত টাকা খরচ হয় 

রাজশাহী থেকে সাজেক যেতে কত টাকা খরচ হয়

বর্তমান সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের জন্য সাজেক হচ্ছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সাজেক বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত। সাজেকের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৮০০ ফুট।রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও ভৌগোলিক কারণে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে যাতায়াত অনেক সহজ। খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সাজেক দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার এবং দীঘিনালা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। রাজশাহী থেকে সাজেক যাওয়ার জন্য সরাসরি কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেই। তবে কয়েকটি ধাপে ভ্রমণ করলে সহজেই সাজেক পৌঁছানো যাবে। চলুন আলোচনা করা যাক-

রাজশাহী থেকে সাজেক যেতে হলে আপনাকে প্রথমত চট্টগ্রাম বা খাগড়াছড়ি যেতে হবে। আপনি রাজশাহী থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম যেতে চাইলে, এসি এবং নন-এসি বাস পেয়ে যাবেন। যেমন- শ্যামলী, গ্রীন লাইন ইত্যাদি। রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লাগে। বিকল্পভাবে আপনি চাইলে, রাজশাহী থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য বাস ধরতে পারেন।তবে খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য সরাসরি বাস নাও পেতে পারেন। রাজশাহীতে চট্টগ্রাম যেতে নন-এসি বাসে খরচ পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। এসি বাসে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। তবে, সময়ের পরিবর্তে খরচের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। এই খরচের পরিমাণটি ধারণা মাত্র।

এরপর চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যেতে বাস ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাগবে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে আপনি চাইলে চাঁদের গাড়ি অথবা জিপ ভাড়া নিতে পারেন। একটি জিপ অথবা চাঁদের গাড়িতে ১০ থেকে ১৫ জন যেতে পারবে না। এই গাড়িগুলোর ভাড়া ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। জনপ্রতি প্রায় ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা পড়তে পারে। তবে কারণবশত সময়ের পরিবর্তে খরচের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। রিসোর্টে থাকার খরচ- সাধারণ কটেজ/হোটেল প্রতি রাতের জন্য ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা খরচ হবে। মাঝারি রিসোর্টে ২০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা খরচ হবে। বিলাসবহুল রিসোর্টে ৫০০০ থেকে ৮০০০ টাকা খরচ হবে। সময়ের পরিবর্তে কম বেশি হতে পারে।

সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ খরচ

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পরিচালিত সাজেক রিসোর্ট। সাধারণত নন-এসি রুম গুলোর ভাড়া ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সাথে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। সেনাবাহিনী এবং প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য কিছুটা ছাড় রয়েছে। চলুন এবার, রিসোর্ট সম্পর্কে আলোচনা করা যাক-

রাজশাহী-থেকে-সাজেক-যেতে-কত-টাকা-খরচ-হয়.webp

রন্ময় রিসোর্টঃ এই রিসোর্টে পাঁচটি রুম রয়েছে। প্রতিটি রুমে কমপক্ষে দুইজন করে থাকতে পারবেন। নিচ তলার রুম গুলোর ভাড়া ৪৪৫০ টাকা পরতে পারে। আবার আপনারা চাইলে ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপর তলায় দুইটি কক্ষ রয়েছে যার ভাড়া চার হাজার ৪৯৫০ টাকা। এখানেও একটি রুমে দুইজন করে থাকতে পারবেন। আবার আপনি চাইলে ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। সময়ের পরিবর্তে খরচ কম বেশি হতে পারে।

মেঘ পুঞ্জি রিসোর্টঃ এই রিসোর্টে সুন্দর ডেকোরেশন এবং আকর্ষণীয় ভিউ সহ রয়েছে চারটি কটেজ। এই রিসোর্ট এর প্রতিটি কটেজে চারজন থাকতে পারবেন। মেঘ পুঞ্জি রিসোর্ট এর ভাড়া ৪০০০ থেকে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে সময়ের পরিবর্তে খরচ কম বেশি হতে পারে।

মেঘ মাচাং রিসোর্টঃ এই রিসোর্টে সুন্দর ভিউ এবং তুলনামূলক কম খরচে থাকা যায়। মেঘ মাচাং রিসোর্ট অনেক পছন্দের এবং সাথে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এই রিসোর্টে পাঁচটি কটেজ রয়েছে। যার ভাড়া ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত। সময় পরিবর্তে খরচ কম বেশি হতে পারে।

জুম ঘর ইকো রিসোর্টঃ এই রিসোর্টে পৃথকভাবে মোট ছয়টি কাপল রুম রয়েছে। প্রতিটি রুমে সর্বোচ্চ চারজন থাকা যাবে।প্রতিটি কটেজের ভাড়া চার হাজার টাকা। সময়ের পরিবর্তে খরচ কম বেশি হতে পারে।

আলো রিসোর্টঃ সাজেক থেকে একটু আগে রুইলুই পাড়ায় এটি অবস্থিত। এই রিসোর্টে ছয়টি রুম রয়েছে যার মধ্যে চারটি কাপল রুম রয়েছে। এই রিসোর্ট এর ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। সময়ের পরিবর্তে খরচ কম বেশি হতে পারে।

আদিবাসী ঘরঃ আপনার বাজেট যদি কম থাকে তাহলে আপনি চাইলে আদিবাসী ঘর রিসোর্টে থাকতে পারেন। এখানে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ পড়বে। এই রিসোর্টে ফ্যামিলি এবং কাপল থাকার জন্য আদর্শ না। তবে এখানে বন্ধু-বান্ধব থাকার জন্য সুন্দর জায়গা। সময়ের পরিবর্তে এখানেও খরচ কম বেশি হতে পারে।

সব রিসোর্টে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দমত খাবার বলে রাখলে সেই মতো তারা আপনাকে রান্না করে দিবে।এক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিবেলা জনপ্রতি ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। খাবার তালিকায় পাবেন- ভাত, আলু ভর্তা, মুরগির মাংস ইত্যাদি। আবার আপনি চাইলে রাতে বার বি কিউ করে নিতে পারবেন এবং এর সাথে স্থানীয় ব্যাম্বো চিকেন সহ আরো স্পেশাল খাবার নিতে পারবেন। সাজেকে সস্তায় পেঁপে, আনারস ও কলা ইত্যাদি পেয়ে যাবেন। তবে সবকিছুর খরচের একটি ধারণা দিয়ে রাখলাম। সময়ের পরিবর্তে খরচ এর থেকে একটু কম অথবা একটু বেশি হতে পারে।

সাজেক ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু টিপস

সাধারণত সাজেকের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা নেই, তবে সোলার পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি চাইলে সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক রাখতে পারেন। সাজেকে শুধুমাত্র রবি, এয়ারটেল এবং টেলিটক সিমের নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়।সাজেক যাওয়ার পর অনেকটাই আঁকাবাঁকা এবং উঁচু নিচু তাই এই পথগুলো একটু বিপদজনক। জিপ অথবা চাঁদের গাড়িতে ভ্রমন করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। সাজেক যাওয়ার জন্য কোনো গাইডের প্রয়োজন হয় না। আপনি যদি আদিবাসীদের ছবি তুলতে চান, তাহলে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিয়ে নিবেন। 

আদিবাসী মানুষ জন অনেকটাই সহজ সরল। তাদের সাথে সুন্দর এবং ভদ্র ব্যবহার করতে হবে। তাদের রীতি-নীতির উপর সম্মান দেখাতে হবে। ছুটির দিনে ঝামেলায় পড়তে না চাইলে, আগে থেকেই রিসোর্ট বুকিং করে রাখতে হবে। যাওয়ার পথে বেশ কয়েক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীদের ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে কিছু তথ্য জমা দিতে হবে। আপনার নিরাপত্তার স্বার্থে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। আপনার সাথে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি রাখতে হবে। যদি দুই তিন দিনের জন্য যেতে চান তাহলে রিজার্ভ গাড়ি নেওয়ার দরকার নেই। 

সাজেকে কি দেখবেন এবং কখন যাবেন

সাজেকে রয়েছে মনোরম পাহাড়ের শারি এবং সাদা সাদা তুলার মত মেঘের ভ্যালি যা আপনার মনকে নিমিষেই ভালো করে দিবে। সাজেক হচ্ছে আশ্চর্য্য জনক জায়গা। যেখানে আপনি একদিনে তিন রকম রূপের চমৎকার দৃশ্য দেখতে পারবেন। কখনো বা আপনার খুব গরম অনুভূতি হবে। আবার কখনো বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন। আবার চোখের পলকে মেঘের ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাবে চারিপাশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং তুলোর মতো মেঘের পাহাড় এবং পাহাড়ের মেঘের উড়াউড়ির খেলা আপনাকে মুগ্ধ করে দিবে।

রাজশাহী-থেকে-সাজেক-যেতে-কত-টাকা-খরচ-হয়.webp

সাজেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কংলাক পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ভারতের লুসায় পাহাড় দেখা যায়। আপনি চাইলে রুইলুই পাহাড় থেকে প্রায় দুই ঘন্টা ট্র্যাকিং করে কমলক ঝর্ণা দেখতে আসতে পারবেন। অনেকের কাছে সুন্দর ঝরনাটি খুবই পছন্দনীয় একটি জায়গা। দিন অথবা রাত সাজেক হচ্ছে শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো। সাজেকে সকাল সকাল ভোরের সময় টা খুবই চমৎকার। আর এই চমৎকার মুহূর্তটি উপভোগ করার জন্য আপনাকে সকাল সকাল উঠে হ্যালিপ্যাডে আসতে হবে। এখান থেকে আপনি সূর্যোদয়ের সুন্দর একটি মুহূর্ত দেখতে পাবেন।

সাজেকে আপনি সন্ধ্যার পর কোটি কোটি তারার মেলা দেখতে পারেন যা আপনার প্রাণ জুড়িয়ে দিবে। সাথে সাথে ঘুরে দেখতে পারবেন আশেপাশে আদিবাসীদের জীবন যাপন। সহজ সরল এসব মানুষের জীবন যাপন আপনার ভালো লাগবে। সাজেক কখন যাবেন? আসলে সাজেকের রূপের এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। আপনি চাইলে বছরের যে কোনো সময় সাজেক ভ্রমণ করতে পারেন। তবে জুলাই এবং নভেম্বর মাসের দিকে সাজেকে মেঘের খেলা বেশি দেখা যায়। 

রাজশাহী থেকে সাজেক যেতে কত টাকা খরচ হয়-শেষ কথা

এই পোষ্টের মধ্যে রাজশাহী থেকে সাজেক যেতে কত টাকা খরচ হয় সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের জন্য সাজেক হচ্ছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সাজেক বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত। সাজেকের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৮০০ ফুট।

সাজেকে রয়েছে মনোরম পাহাড়ের শারি এবং সাদা সাদা তুলার মত মেঘের ভ্যালি যা আপনার মনকে নিমিষেই ভালো করে দিবে। সাজেক হচ্ছে আশ্চর্য্য জনক জায়গা। যেখানে আপনি একদিনে তিন রকম রূপের চমৎকার দৃশ্য দেখতে পারবেন। সাজেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কংলাক পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ভারতের লুসায় পাহাড় দেখা যায়। আপনি চাইলে রুইলুই পাহাড় থেকে প্রায় দুই ঘন্টা ট্র্যাকিং করে কমলক ঝর্ণা দেখতে আসতে পারবেন। অনেকের কাছে সুন্দর ঝরনাটি খুবই পছন্দনীয় একটি জায়গা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি দুর্দান্ত আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url